আল্লাহ চাইলেই যেভাবে মানুষকে সম্মান দেন ও অসম্মান করেন
পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতা, সম্মান ও কর্তৃত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা, সম্মান দান করেন আবার যার থেকে ইচ্ছা এসব কেড়ে নেন। ক্ষমতা ও সম্মান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিশেষ অনুগ্রহ। অনুগ্রহ পেয়ে কখনো অহংকার করতে হয় না। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সৃষ্টিজীবের ওপর সদয় থাকতে হয়। অন্যথায় আল্লাহ তায়ালা তা কেড়ে নেন।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে—
قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِكَ الۡمُلۡكِ تُؤۡتِی الۡمُلۡكَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡكَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِكَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ২৬)
অর্থাৎ, মানবসমাজের ভারসাম্য রক্ষায় মহান আল্লাহ মানবজাতিকে নানা শ্রেণি ও গোষ্ঠীতে বিন্যস্ত করেছেন। তিনি কাউকে জ্ঞানী করেছেন আর কাউকে মূর্খ, কাউকে ধনী করেছেন আর কাউকে দরিদ্র, কাউকে শাসক করেছেন আর কাউকে জনতা। পার্থিব জীবনে আল্লাহ যাঁদের সম্মানিত করেছেন তিনি তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তিনি অপরপক্ষের প্রতি সুবিচার করেছেন। এভাবেই তিনি শ্রেণিবদ্ধ মানবসমাজের ভারসাম্য রক্ষা করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘এরা কি তোমার প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং পরস্পরের ওপর মর্যাদায় উন্নত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; এবং তারা যা জমা করে তা থেকে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
আর যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা শক্তি বা ক্ষমতা দিয়েছেন তারা আল্লাহর এই অনুগ্রহের সদ্ব্যবহার না করে অত্যাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন আল্লাহ মানবজাতির স্বার্থে ক্ষমতার পালাবদল ঘটান। ইরশাদ হয়েছে—
وَ لَوۡ لَا دَفۡعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعۡضَهُمۡ بِبَعۡضٍ لَّهُدِّمَتۡ صَوَامِعُ وَ بِیَعٌ وَّ صَلَوٰتٌ وَّ مَسٰجِدُ یُذۡكَرُ فِیۡهَا اسۡمُ اللّٰهِ كَثِیۡرًا ؕ وَ لَیَنۡصُرَنَّ اللّٰهُ مَنۡ یَّنۡصُرُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَقَوِیٌّ عَزِیۡزٌ
‘আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তা হলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থান, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদগুলো—যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম।’ (সূরা হজ, আয়াত : ৪০)
অর্থাৎ আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেননি, এটি তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। বরং বিভিন্ন সময় দুনিয়ায় একটি দলকে দিয়ে তিনি অন্য একটি দলকে প্রতিহত করতে থেকেছেন।
নয়তো কোন একটি নির্দিষ্ট দল যদি কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব লাভ করতো তাহলে ইবাদাত গৃহসমূহও বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতো না।সূরা বাকারায় এ বিষয়বস্তুকে এভাবে বলা হয়েছে,
وَ لَوۡ لَا دَفۡعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعۡضَهُمۡ بِبَعۡضٍ ۙ لَّفَسَدَتِ الۡاَرۡضُ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ ذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ
যদি আল্লাহ লোকদেরকে একজনের সাহায্যে অন্যজনকে প্রতিহত না করতে থাকতেন তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টিজগতের প্রতি বড়ই করুণাময়। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)