বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের জালে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বভাবতই এ সময়ে বৈশ্বিক ও ভূরাজনৈতিক কিছু বিষয়বাস্তবতা সামনে এসে পড়ে। শক্তিধর পশ্চিমা দেশসহ প্রতিবেশী ভারত ও চীন অবশ্যই চাইবে তাদের দৃষ্টিতে বশংবদ একজন সরকার প্রধান এবং তার নেতৃত্বাধীন একটি দল ক্ষমতায় আসুক। এ চাওয়া নিশ্চয়ই তাদের একক দেশ বা দেশসমূহের স্বার্থকে হাসিল করার জন্য হবে এটাই স্বাভাবিক। অভ্যন্তরীণ শক্তি বা রাজনৈতিক দলসমূহ বিশেষকরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় পার্টি নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশে বিদেশে লবিং শুরু করছে এবং করবে। ছোট ছোট দলগুলো তৎপর হয়ে উঠছে কার সাথে লবিং করে একটি- দুটি আসন বাগানো যায়। এর বাইরে দেশের সামরিক বাহিনীকে সুড়সুড়ি দেয়ার লোকেরও অভাব নেই। এক কথায় উন্নয়নশীল, শান্তিপ্রিয় ও সামরিক শক্তিতে দুর্বল রাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের সময় হলে ক্ষমতালোভী লব-কুশদের ড্্রামা ও অপপ্রচারের আধিক্য দেখা যাওয়া এক সাধারণ বাস্তবতা; বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের এশটি বিশেষ বাহিনীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিছক এ দেশের উপর তাদের চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন। ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর কাছে গুরুত্বের কেন্দ্রন্দিুতে অবস্থান করছে। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নের রোল মডেল তথা ’দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়’ হিসেবে উঠে এসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পা রেখেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র যা নিশ্চিত করবে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ। এরইমধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় অর্থনৈতিক করিডোরের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। একটু গভীরে ভাবলে বুঝা যায়, বাংলাদেশ তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত দ্বারা ঘেরা বিধায় উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজ্যগুলোর বিভিন্ন অর্থিক সংযোগ, জনযোগাযোগসহ পরিবহন সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ভারতের তিক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতার রদ-বদল ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-রাজনীতি কৌশলের উপর। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের সরাসরি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে যা কৌশলগতভাবে শুধু প্রতিবেশী এই তিনটি দেশ নয় বিশে^র পরাশক্তিধর দেশগুলোর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি, ভৌগোলিক কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষকরে আশিয়ান ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ গত এক দশকে শুধু অর্থনৈতিক নয় ভূ-রাজনৈতিকভাবে অনেকটা গুরুত্বহীনতার আবেশ কাটিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলদেশ আজ এশিয়ার ভবিষ্যৎ বিনির্মানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিগণিত হয়ে উঠছে। এ কারণে বাংলাদেশকে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুচতুরতার সাথে নিজের গড়ে উঠা গুরুত্বকে কাজে লাগানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধাসহ উন্নয়ন রথযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হবে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, কৌশলগত বিষয় বিবেচনায় নিয়েই হয়ত বাংলাদেশ চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। এখানেও সাবধানতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কারণ ইতোমধ্যেই চীনের সাথে বন্ধুত্ব তার পশ্চিমা প্রতিদ্বন্ধী বা শত্রু বিশেষকরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কোনভাবেই মেনে নিচ্ছে না, যার একটি ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা বলে ধারণা করা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্র আরও এক ধাপ এগিয়ে নির্বাচনকালীন একটি তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। গত কয়েক মাসের গুঞ্জন অনুসারে সোজাসাপ্টাভাবে বলা যায়, তারা ড. ইউনুস সাহেবের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একটি কথা দেশি-বিদেশি লব-কুশদের স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি, ষড়যন্ত্র করে বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা যায় না। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধ তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেয়া পরদেশী কোন ফর্মূলা তারা মানবে না। স্বাধীনতার ৫২ বছরের রাজনৈতিক উত্থান-পতন থেকে আমরা এটাই দেখেছি- স্বাধীনতার পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পারে। আজ যেমন দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার জন্য, তেমনি এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিনও বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে বিদেশি প্রেসক্রিপশন ছিল যার আসল লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী দ্বিতীয় একটি পাকিস্তান নির্মাণের। এ নির্মম ষড়যন্ত্রে মীরজাফরের ভূমিকায় ছিলেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। তিনি যথারীতি বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে মসনদে বসলেন। পরিণতি সবাই জানেন- ক্ষমতা নিলেন নাটকের ছায়া নায়ক জেনারেল জিয়া। তিনি সংবিধান থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুছে বাংলাদেশকে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রাথমিক পর্ব শেষ করলেন। ইতোমধ্যে ১৯৮১ সালের ৩১ মে জেনারেল জিয়া রক্তের ঋণ পরিশোধ করেন নিজের জীবন দিয়ে। দ্বিতীয় সামরিক সরকার জেনারেল এরশাদ এসে জেনারেল জিয়াউর রহমানের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করলেন। সংবিধানে ২(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে পরিষ্কার করলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’।
তারপর অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণ আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থায় ১৯৯১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, কারণ তখনো জনগণের ভ্রম কাটেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে যথারীতি পাকিস্তানী প্রেসক্রিপশন ফলো করতে লাগলো। স্বাধীন দেশে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হননকারী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমদের মন্ত্রীত্ব দেয়া হলো, লাল-সবুজ পতাকা উড়ানো হলো তাদের গাড়িতে। এবার বাঙালির ‘কানে কিছুটা জল গেল’- তারা বুঝল বেসামরিক সরকার হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। সুযোগ পেলে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবে। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হলো যখন ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলো; এবার তারা বাংলা ভাই ও শায়েখ আব্দুর রহমানদের জন্ম দিল। ইসলামী শরিয়া শাসনের নাম করে মানুষকে উল্টো করে গাছে লটকিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে ধর্মীয় মৌলবাদী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হলো। ইতোমধ্যে ২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচন সমাগত। বিএনপি-জামাত জোট নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবার নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগে গেল। পরিণতিতে তৃতীয় পক্ষের আগমন ঘটল- সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলো। বিএনপি জোট অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার ব্যবস্থাকে ধংস করে দিল। দুবছর পর ২০০৮ সালে উক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন দেয় এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। গত তিনবার একটানা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষতায় থেকেছে বৈধভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এই ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের অর্জন কী সেটা অবশ্যই বিবেচনার দাবী রাখে।
শেখ হাসিনা সরকারের অবদানে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আজকের উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৪৩ ভাগের বেশি মানুষ, আর ১৪ বছরের ব্যবধানে সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে আজ ১৮.৭ ভাগে। সরকারের সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবানুগ, লাগসই ও স্থায়ী দারিদ্র্য নিরসনের দর্শন ‘ক্ষুদ্র ঋণ নয় ক্ষুদ্র সঞ্চয়’ মডেল দরিদ্র মানুষকে ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ে দিয়েছে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠী ঋণের কিস্তির নিত্যনৈমিত্তিক জ্বালা থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিক্ষিতের হার ৫২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ ভাগে, মাথাপিছু আয় ৬৫০ মার্কিন ডলার থেকে ২৮২৪ মার্কিন ডলার, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর, বিদুৎ উৎপাদন ৩,০০০ মেগাওয়াট থেকে ১৫,৬০৪ মেগাওয়াট, জিডিপি ৫ থেকে ৭.২৮, রফতানি আয় ১০ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলারে। নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল, মংলায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অসংখ্য দৃশ্যমান উন্নয়ন অবকাঠামো। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবে সর্বমহলে বিবেচ্য। বলা যায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও দক্ষ নেতৃত্বই অসামান্য এ অর্জনের মূল চাবিকাঠি। আমাদের সামনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ ও স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১, যার ভিত্তি হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের সাড়ে ষোল কোটি মানুষ; তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন এবং তাকে টেকসই করা। ৮৭ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, ৮৭ হাজার গ্রামের উন্নয়ন টেকসই হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন টেকসই হবে- বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
বর্ণিত সকল বিষয় সামনে রেখে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, আমার মতামত পক্ষপাতিত্ব দোষে দুষ্ট হতে পারে, তথাপি আমি আপনাদের সদয় বিবেচনার জন্য তুলে ধরছি। কারণ, দেশটি আমাদের কারো একার নয় বা কোন বিশেষ গোষ্ঠীর নয়- এটি আমাদের ভাইয়ের রক্তে ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত একটি রক্তস্নাত স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ে সেদিন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সাড়ে সাত কোটি মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মনে রাখতে হবে, সেদিনও দেশীয় দালাল, বিশ^াসঘাতক ও আন্তর্জাতিক বাধা ছিল। ১৯৭৫ সালে সেই একই দেশি-বিদেশি চক্র আমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। সেই একই চক্র তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা করেছিল। সেই একই চক্র ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে ইসলামী জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও লালন করেছিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করেছিল। সর্বশেষ কথা, দেশে যখনই নির্বাচন আসে সেই একই পশ্চিমা ও দেশীয় অপশক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফর সম্পর্কিত বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার আমাদের রাষ্ট্রীয় দৃঢ়তা ও নির্বাচনী কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার সংকল্পকে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে যা আমাদের নিজস্ব অর্জন গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবে এবং নির্ধারিত সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ দিয়ে শেষ করবো। বৃটিশের ছল ও প্রলোভন ছিল মীর জাফরকে নবাব করবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের লক্ষ্য ছিল একটি আজ্ঞাবহ শাসক যার দ্বারা বৃটিশ বেনিয়াদের স্বার্থ উদ্ধার হয় এবং তার পরিণতি ছিল ভারতবাসীর ২০০ বছরের গোলামী। ‘আপন ভালো পাগলেও বোঝে’, কিন্তু আমরা বুঝি না। নিজেদের বুঝতে হবে এবং সে মতো কাজ করতে হবে।
লেখক: ড. প্রশান্ত কুমার রায়, সম্পাদক ও প্রকাশক, সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক