বেসিক ব্যাংকে আবদুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি
ছাত্রজীবনে বা তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবু সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুনজরে পড়ে বাগেরহাটের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর পিতার ছেলে আবদুল হাই বাচ্চু। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোল্লাহাট উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী আবদুল হাই বাচ্চু। দুই বছর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন রাজনীতির ময়দানে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে আর কোথাও তেমন একটা আলোচনাও হয়নি।
এ আবদুল হাই বাচ্চুই আবার দীর্ঘদিন পর আলোচনায় আসেন ২০০৯ সালে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স (বেসিক) ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে তার নিয়োগ সে সময় ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টদের অবাক করেছিল। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর দুই দশক পদাধিকার বলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্প সচিব। পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যও ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু সে ধারা ভঙ্গ করে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়ে যান আবদুল হাই বাচ্চু।
তার এ নিয়োগের বিষয়টি কম রহস্যাবৃত নয়। সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আবদুল হাই বাচ্চুর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না। জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তার জন্য কোনো তদবির বা সুপারিশ করেননি বলে দলটির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছে। আবার আবদুল হাই বাচ্চুর সময়ে বেসিক ব্যাংকের লুট হওয়া অর্থে জাতীয় পার্টি বা দলটির অন্য কারো লাভবান হওয়ারও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বেসিক ব্যাংক থেকে আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন ২০১৪ সালে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতও জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে ব্যাংকটির ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে আবদুল হাই বাচ্চুর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যদিও প্রায় এক দশক পেরুলেও এখনো জানা যায়নি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে বাচ্চুর নিয়োগের রহস্য। এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়েরও।
একসময়ে বেসিক ব্যাংক পরিচিতি পেয়েছিল সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভালো ও লাভজনক উদাহরণ হিসেবে। বৈশ্বিক জায়ান্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হতো ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিকে। প্রতিষ্ঠার পর দুই দশক ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করে আসছিল বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাও ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকের চেয়ে বেশি। সরকারি অন্য ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত হলেও এ সংকট থেকে একপ্রকার মুক্ত ছিল বেসিক ব্যাংক।
আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময়ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণকৃত ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ। ওই বছর ৬৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। কিন্তু বাচ্চুর নিয়োগের পর তার নেতৃত্বে ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয় বেসিক ব্যাংক। চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ববলে বড় ঋণ বিতরণ শুরু করেন বাচ্চু। অজ্ঞাত-অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের নামে বিতরণ করা হয় বিপুল পরিমাণ ঋণ। দ্রুত অবনমন ঘটতে থাকে বেসিক ব্যাংকের। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বাড়তে থাকে খেলাপির পরিমাণও। এর বিপরীতে কমতে থাকে মুনাফার অংক। পরিচালন ব্যয়ও বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই অবাধে নিয়োগ দিতে থাকেন জনবল। অবাধে নিয়োগ দেয়া জনবলকে কাজে লাগাতে খুলতে হয়েছে একের পর এক শাখা।
২০১৩ সালে এসে প্রথমবারের মতো লোকসানের দেখা পায় ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে তিনি যখন পদত্যাগ করেন, তখন ব্যাংকটির ঘাড়ে শতকোটির টাকার বেশি লোকসানের বোঝা। ব্যাংকের শাখার সংখ্যাও ততদিনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে বাচ্চুর নিয়োগের সময়কার চেয়ে দ্বিগুণে। ওই সময়ের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের ধাক্কা আজও সামলে উঠতে পারেনি বেসিক ব্যাংক। বরং ব্যাংকটির লোকসানের পাল্লা কেবল ভারীই হয়েছে।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বেসিক ব্যাংকের নিট লোকসান হয়েছে ৪ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর জন্য বাজেট থেকে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে সরকার। বিপুল অংকের এ অর্থ পেয়েও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বেসিক ব্যাংক। উল্টো ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকায়। বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৫৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ এখনো খেলাপি।
বেসিক ব্যাংকের ২০২২ সাল শেষে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৩ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির খাতায় ছিল ৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। আদায় অযোগ্য হওয়ায় আরো ২ হাজার ৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা সঞ্চিতিও সংরক্ষণ করতে পারছে না এখন বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণও ৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার বেশি।
লুণ্ঠনের শিকার হওয়ার পর বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাউদ্দিন এ মাজিদকে। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর টেনে তোলার চেষ্টা করেও বেসিক ব্যাংককে দাঁড় করাতে পারেননি তিনি। আলাউদ্দিন এ মাজিদ গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০০৯ সাল পরবর্তী সময়ে বেসিক ব্যাংকে যা হয়েছে, সেটিকে ব্যাংকিং বলা যায় না। এ সময়ে ব্যাংকের অর্থ স্রেফ লুট হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে টানা ছয় বছর আমি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নিজের দীর্ঘ ব্যাংকিং জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বেসিক ব্যাংককে টেনে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উল্লেখ করার মতো ব্যাংকটির কোনো উন্নতি হয়নি।’
আলাউদ্দিন এ মাজিদ বলেন, ‘গতানুগতিক চেষ্টায় বেসিক ব্যাংককে বাঁচানো সম্ভব হবে না। এজন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি গ্রাহকদের মূল ঋণ আদায় করে ব্যাংক থেকে বিদায় করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিয়ে সে সময় এগিয়ে আসেনি। সুদ মওকুফ করে মূল ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিলে খেলাপি ঋণের বড় একটি অংশ আদায় হতে পারত। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিয়ে এটি করবে বলে আমার মনে হয় না।’
দিন যত এগোচ্ছে বেসিক ব্যাংকের বিপর্যয়ও তত গভীর হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে সরকারের মধ্যেও নানা কথা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এটিকে একীভূতকরণের প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছিল। আবার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে আমানত প্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ বেশকিছু দাবিও জানানো হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের ভারে বিধ্বস্ত বেসিক ব্যাংক দেউলিয়াত্বের আশঙ্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বেসিক ব্যাংকের মোট দায়ের পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা হলো গ্রাহকদের আমানত। বেসিক ব্যাংকের আমানতের সিংহভাগই হলো সরকারি। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এ ঋণের মধ্যে ৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা খেলাপি, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যেকোনো ব্যাংক ঋণ বিতরণ করা হয় আমানতের অর্থ থেকে। বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৫৮ শতাংশ খেলাপি হওয়ায় গ্রাহকদের আমানত পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা বর্তমানে ব্যাংকটির নেই।
২০০৬ সালে বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এত ছোট অংকের ঋণ পোর্টফোলিও নিয়েও ওই বছর ৫৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। এরপর ২০০৭ সালে ২৮ কোটি ও ২০০৮ সালে ৫৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে বেসিক ব্যাংক। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষেও বেসিক ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ। এর পরও ব্যাংকটি ওই বছর ৬৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জনে সমর্থ হয়। ওই সময় বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
এরপর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন আবদুল হাই বাচ্চু। তার সময় নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট বড় করে তোলা হয়। এতে ২০১০ ও ২০১১ সালে নিট মুনাফা কিছুটা বাড়ে। কিন্তু ২০১২ সালেই বেসিক ব্যাংকের নিট মুনাফা নেমে আসে মাত্র ২ কোটি টাকায়। তার পর থেকে ১০ বছর ধরে লোকসান দিচ্ছে একসময়ের সেরা ব্যাংকটি।
বেসিক ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করে ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১১ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির লোকসান বেড়ে হয় ৩১৪ কোটি টাকা। অতীতের লুটপাটের চূড়ান্ত ধাক্কা লাগে বেসিক ব্যাংকের ২০১৬ সালের নিট মুনাফায়। বছরটিতে ব্যাংকটির লোকসান দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকায়। এরপর ২০১৭ সালে ৬৮৪ কোটি টাকা নিট লোকসান দিয়েছে বেসিক ব্যাংক। ২০১৮ সালেও ৩৫৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি। ২০১৯ সালে ৩২৭ কোটি টাকা নিট লোকসান গোনার পর ২০২০ সালেও ৩৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বেসিক ব্যাংকের। ২০২১ সালে ব্যাংকটির নিট লোকসান হয় ৩৯৭ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ২০২২ সালেও ১৩০ কোটি টাকার নিট লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে বেসিক ব্যাংকের নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপিদের বড় অংশেরই কোনো খবর নেই ব্যাংকের কাছে। ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। রাজধানীর গুলশান, শান্তিনগর, দিলকুশা, বাবুবাজার ও প্রধান শাখা এবং চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার মাধ্যমে দেয়া হয় এসব ঋণ। মাত্র ৪২ গ্রাহককে দেয়া হয় ৩ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসব ঋণ বিতরণের পর থেকেই খেলাপি। এর মধ্যে ১৮ গ্রাহকের ঋণ এরই মধ্যে অবলোপন করা হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের শীর্ষ ২৫ গ্রাহকের মধ্যে ২২টিই খেলাপি। এসব খেলাপি গ্রাহকের কাছে ব্যাংকের পাওনা অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। চেষ্টা করেও এসব খেলাপি গ্রাহকদের নাগাল পাচ্ছে না ব্যাংকটি। ঋণখেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে আমাদের বাড়ি লিমিটেডের ৬১০ কোটি, নিউ ঢাকা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ২৪২ কোটি, অ্যামেরাল্ড অটো ব্রিকস অ্যান্ড অ্যালিডের ২৩৬ কোটি, আলী গ্রুপের ২২৯ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ২২১ কোটি, নীলসাগর এগ্রো অ্যান্ড এলিডের ১৮৮ কোটি, ফিয়াজ গ্রুপের ১৯৩ কোটি, অ্যারিস্টোক্র্যাট গ্রুপের ১৭০ কোটি, মাইমকো কার্বন লিমিটেড অ্যান্ড অ্যালিডের ১৬৬ কোটি, ভাসাভি ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যালিডের ১৫৪ কোটি, ওয়েল টেক্স অ্যান্ড অ্যালিডের (আদিব ডাইং) ১৪৭ কোটি, আজবিহা ইয়ুথের ১৪৩ কোটি, রাইজিং গ্রুপের ১৩৫ কোটি, ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং লিমিটেডের ১৩২ কোটি, বশির গ্রুপের ১৩১ কোটি, জিল ওয়ারস লিমিটেডের ১২৭ কোটি, ম্যাপ অ্যান্ড মুলার গ্রুপের ১২১ কোটি, অ্যামারাল্ড অয়েল অ্যান্ড অ্যালিডের ১২১ কোটি, রিজেন্ট ওয়েভিং লিমিটেডের ১১৭ কোটি, আইজি নেভিগেশন লিমিটেডের ১১৬ কোটি, বে নেভিগেশন লিমিটেডের ১১৪ কোটি এবং প্রোফুশন টেক্সটাইল লিমিটেডের ১১২ কোটি টাকা। সুদসহ বর্তমানে এ ঋণের পরিমাণ আরো বেড়েছে। এসব খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো অর্থ আদায় করতে পারছে না বেসিক ব্যাংক।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আনিসুর রহমান। তিনি বর্তমানে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থান করছেন। গত মাসে তিনি বণিক বার্তাকে বলেছিলেন, এমডি পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ব্যাংকটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকের বেশি খেলাপি হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাননি।
ওই সময় মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার ৮ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে ব্যাংকটিকে মুনাফায় আনা সম্ভব নয়। স্বল্প সুদের সরকারি আমানত সংগ্রহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোনো সাড়া আমি পাইনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আমানতের জন্য এ ব্যাংকের কাছে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দাবি করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বেসিক ব্যাংকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত, বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠনের প্রায় ১০ বছর পর গতকাল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার পর ব্যাংকটির অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে ৫৮টিতে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাচ্চুসহ বেসিক ব্যাংকের ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ১০১ জন গ্রাহককে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এসব মামলার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপনের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। [হাছান আদনান, বণিক বার্তা]
আহমা/চাহ