মহান বিজয়দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যশোরের খতমে কুরআন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
মহান বিজয়দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যশোর জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে খতমে কুরআন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী এ আয়োজনে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফিরাত, দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি এবং জাতির অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন যশোর জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর শিক্ষা বোর্ড স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ এবং সরকারি এমএম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে মহান বিজয়দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই বিজয় আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বের ভিত্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও নৈতিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বিল্লাল বিন কাশেম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মহান বিজয়দিবস আমাদের শুধু আনন্দের দিন নয়, আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করার দিন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার সুফল টেকসই করতে হলে সততা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা জরুরি।”
আলোচনা সভায় স্থানীয় আলেম-ওলামাবৃন্দ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আলেম সমাজের অবদান স্মরণ করেন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, ইসলাম শান্তি, ন্যায় ও মানবকল্যাণের শিক্ষা দেয়—যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড অফিসার মোঃ সোলাইমান, ওয়ালিউর রহমান, নজরুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন ও রিপা পারভীন। বক্তারা বলেন, বিজয়দিবস কেবল আনুষ্ঠানিক উদযাপনের বিষয় নয়; এটি আমাদের দায়িত্ববোধকে নতুন করে জাগ্রত করে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তারা আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নৈতিক শিক্ষা, দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বার্তা নিয়মিত প্রচার করে, তাহলে সমাজে সহিংসতা, দুর্নীতি ও অবক্ষয় অনেকাংশে কমে আসবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে খতমে কুরআন অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশেষ দোয়া মাহফিলে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল বীরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর সেনানী, বীরাঙ্গনা এবং স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারীদের স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মনিরুল ইসলাম। সঞ্চালনায় তিনি বিজয়দিবসের প্রেক্ষাপট ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভূমিকা সংক্ষেপে তুলে ধরেন এবং উপস্থিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে পুরো আয়োজনটি হয়ে ওঠে ভাবগম্ভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ।
শেষে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আয়োজকরা জানান, মহান বিজয়দিবস উপলক্ষে এ ধরনের ধর্মীয় ও আলোচনা সভার আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ সমাজে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।