বাংলা বইয়ের ১টি বর্ণও পড়তে পারেনি ২৮ শতাংশ শিশু !
৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ১০.২৮ শতাংশ ছেলে শিশু ও ৮.৭১ শতাংশ মেয়ে শিশু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারেনি। শুধু ১৮.০৪ শতাংশ শিশু পাঁচটির মধ্যে কমপক্ষে চারটি শব্দ শনাক্ত করতে পেরেছে। অন্যদিকে, ৬১.৯৫ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৫৩.১৪ শতাংশ মেয়ে শিশু তিনটি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনী সাবলীলভাবে পড়তে পারেনি।
বুধবার (১৪ জুন) ঢাকার ইউসেপ বাংলাদেশ কনফারেন্স কক্ষে ‘শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা ও শিক্ষার গুণগতমান অর্জন’ শীর্ষক জাতীয় শিক্ষা সংলাপে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ‘নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত মূল্যায়ন (সিএলএ)’ নামক একটি জরিপে এই তথ্য উঠে আসে।
অক্সফাম আইবিআইএস এবং স্ট্রিট চাইল্ড-ইউকে এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘এডুকেশন আউট লাউড (ইওএল)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এ প্রকল্পের অন্যতম কর্মসূচি হিসাবে ‘নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত মূল্যায়ন (সিএলএ)’ নামক একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়।
খুলনা জেলার ৩৬টি গ্রাম ও রাজশাহী জেলার ৫২টি গ্রামে জরিপ করে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপে গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়নকৃত শিশুর তথ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে প্রথম শ্রেণির ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং তৃতীয় শ্রেণির ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবচেয়ে কম মূল্যায়ন করা শিশুর সংখ্যা ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির। খুলনা ও রাজশাহী উভয় জেলার স্কুলে ছোট শ্রেণি থেকে বড় শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র–ছাত্রীদের ভর্তির হার কমার প্রবণতাও দেখা গেছে।
পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ইংরেজি ভাষায় শিখন ফলাফলে দেখা গেছে, ছেলে শিশুর মধ্যে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও মেয়ে শিশুর মধ্যে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারেনি। ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিশু পাঁচটির মধ্যে কমপক্ষে চারটি ইংরেজি শব্দ শনাক্ত করতে পেরেছে।
অন্যদিকে, ৮৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মেয়ে শিশু তিনটি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনী সাবলীলভাবে পড়তে পারেনি।
পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের গণিত বিষয়ে শিখন ফলাফলে দেখা গেছে, ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ শিশু একক অঙ্ক বিশিষ্ট সংখ্যা শনাক্ত করতে পারেনি। শুধু ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিশু দুটি যোগ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।
অন্যদিকে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পাঠ্যবইয়ের দুটি বিয়োগ ও দুটি ভাগ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি পর্যায়ক্রমে ৭৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও ৯৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিশু।
বাবা-মায়ের শিখনের ওপর ভিত্তি করে শিশুর শিখন ফলাফলে দেখা গেছে, যে সকল শিশুর বাবা-মার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ছিল, তারা ভাষার দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করেছে। তাদের তুলনায় স্বল্প শিক্ষিত বাবা-মায়ের শিশুদের ভাষার দক্ষতা সন্তোষজনক ছিল না।
যেসকল বাবা-মায়ের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ছিল তাদের শিশুদের মধ্যে ৪৫৯ জন শিশু বাংলায় এবং ১৯২ জন শিশু ইংরেজিতে একটি কাহিনী পড়তে পেরেছে।
যেসকল অভিভাবকদের প্রাথমিক বা কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, তাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু বাংলায় এবং ৭৮ জন শিশু ইংরেজিতে অক্ষর শনাক্ত করতে পেরেছে।
আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
এছাড়া নাগরিক সমাজ, যুব ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ অনুষ্ঠানে অতিথিরা সংলাপে অংশ নেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। প্রকল্প ও জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্পের কর্মসূচি ব্যাবস্থাপক লিপি আমেনা ও প্রকল্প কর্মকর্তা তুলিকা সরকার।
উপস্থাপনার ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (আইন শাখা) মো. আতাউর রহমান, স্ট্রিট চাইল্ড, ইউকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয় বক্তব্য রাখেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশন উপ-নির্বাহী পরিচালক জাতীয় এই সংলাপের সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তাপস কুমার বিশ্বাস, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক এ কে এম এনামুল হক, আইআইডির প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার (বিইউপি) নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ, রাজশাহী সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন, পটুয়াখালী সদর টাউন কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন, খুলনার খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রুমানাই ইয়াসমিন প্রমুখ দুটি বিষয়ভিত্তিক সংলাপ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
আহমা/চাহ