সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান
একটি স্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সামরিক সদস্যদের নিয়ে গঠিত জোট ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’। সশস্ত্র বাহিনীর সামগ্রিক পেশাদারিত্ব, মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে তাদের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিস আয়োজিত ৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে- সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
জোটটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়: ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বহু সামরিক সদস্যকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আদালত-মার্শালের শিকার হতে হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগ, বিচারবহির্ভূত পদক্ষেপ এবং শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অপব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। এই পরিস্থিতি অনেক সামরিক সদস্য ও তাদের পরিবারকে আর্থিক এবং সামাজিক সংকটে ফেলে দিয়েছে; এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এটি আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ শাহনূর রহমান তার বক্তব্যে বলেন: রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ঔপনিবেশিক যুগের সামরিক আইন সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত, ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
জোটটি সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশনের জন্য পাঁচ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। সেখানে বলা হয়:
• স্বাধীন গঠন: কমিশনে বিচার বিভাগ, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি।
• অতীত অন্যায়ের পর্যালোচনা: অন্যায় বরখাস্ত ও আদালত-মার্শালের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান।
• আধুনিক আইন প্রণয়ন: সশস্ত্র বাহিনীর আইনি কাঠামো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ঔপনিবেশিক যুগের আইন সংশোধন।
• বিচারিক নজরদারি: সামরিক সদস্যদের আপিলের সুযোগ সম্প্রসারণ করে দেওয়ানি আদালতের অধীনে বিচার নিশ্চিতকরণ।
• রাজনীতিমুক্তকরণ: সশস্ত্র বাহিনীতে নিরপেক্ষ নেতৃত্ব এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কমান্ড কাঠামো প্রতিষ্ঠা।
জোটের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির তার বক্তব্যে বলেন: ২০২৪ সালে সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন পেশ করা হয়েছে। তবে, আশাব্যঞ্জক প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার পরেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জোটটি মনে করে যে এই সংস্কার কমিশনের গঠন সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব, মর্যাদা এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করবে যে সশস্ত্র বাহিনী একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ এবং জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
মিনহাজুল আবেদীন এর সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক বর্ষীয়ান সাংবাদিক ডক্টর মাহমুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী- মহসিন রশিদ; রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক- কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান; ডিইউজের এর সভাপতি- শহীদুল ইসলাম; আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ- ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ; সাবেক কূটনীতিক ক্যাপ্টেন মারুফ উজ্জামান; সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী- ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন; রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জবান এর সম্পাদক- রেজাউল করিম রনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রি. জে. মোহাম্মদ হাসান নাসির।
ডিআর