টিউশন ফি দিতে না পারায় পরীক্ষা দেয়া হলো না শরীফের
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) মিডটার্ম পরীক্ষার আগেই ৫০ শতাংশ টিউশন ফি দিতে না পারায় পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়া হয় শরীফ নামের এক শিক্ষার্থীকে। সে বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ৮৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তবে মিডটার্মের আগে সেমিস্টার ফি প্রদানে বাধ্যবাধকতা নেই বলে মত দিয়েছে ইউজিসি৷
বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বরাবর পরীক্ষার অনুমতি চায় ওই শিক্ষার্থী৷ তবে তার আবেদন নাকচ দেন চেয়ারম্যান৷
এর আগে বিশ্ববিদয়ালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই ৫০ শতাংশ ফি পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া৷
হঠাৎ করেই বিশ্ববিদয়ালয় কতৃপক্ষের এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের সাথে বানিজ্যিক আচরণে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদয়ালয়টি৷
অনুসন্ধান বলছে, পরীক্ষায় নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধ করতে পারায় শুধু শরীফই নয় বাতিল করা হয়েছে অজস্র শিক্ষার্থীর পরীক্ষা৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অমানবিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলেই হেনেস্তার শিকার হয় শিক্ষার্থীদের৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন যা মন চায় তখনই তাই করে৷ কে বাঁচলো আর কে মরলো তার খবর নেই৷ তাতে তাদের কিছু যায় আসেনা৷ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলেও টাকা নেবার বেলায় কানাকড়ি তো ছাড় দেয়ই না বরং উল্টো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নানান কৌশলে৷ সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ার নিয়ম থাকলেও কারা পড়ছে কিভাবে পড়ছে এটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷
এদিকে, বুধবার মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে না দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তিনি জানান, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ বাবার অনেক টাকা পয়সা থাকলে তো আর আমার এই সমস্যাটা হতোনা৷ আমার ফিনানশিয়াল ক্রাইসিস থাকায় পরে টাকা দিব বলে অনুরোধ করেছিলাম৷ কিন্তু আমার কথা শোনেনি৷ আমার পরীক্ষা নেওয়া হয়নি৷
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, একদিকে আমার অর্থনৈতিক সংকট চলছে অপরদিকে আমাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলোনা৷ এটা আমার জন্য বড় মানসিক চাপ৷ যে পরীক্ষা দিতে পারলাম না তার জন্য তো আমাকে আবারও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে৷ একে তো ক্রাইসিস আমার তারপরে সেই ক্রাইসিসকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হলো৷
মিডটার্মের আগে সেমিস্টারের ৫০ শতাংশ ফি প্রদান করতে না পারায় শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে না দেবার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের( ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সাথে। তিনি জানান, এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমরা এই প্রথম জানতে পেরেছি৷ নিঃসন্দেহে এটা একটি অনৈতিক কাজ৷ শিক্ষার্থীদের অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা থাকুক আর না থাকুক সেমিস্টারের মাঝ পর্যায়ে এসে এভাবে পরীক্ষা বন্ধ করার এখতিয়ার নেই৷ তারা এটা করতে পারেনা৷ যথাযথ অভিযোগ পেলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইউজিসি ব্যাবস্থা নিবে৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউই ফোন রিসিভ করেননি৷