বাজারে লঙ্কাকাণ্ড!!!এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?
কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে বাজারে লঙ্কাকাণ্ড চলছে। বুধবার সকাল থেকে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। ভারত থেকে আমদানির খবরে দাম কিছুটা কমে এসেছিল। গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার মধ্যে। মঙ্গলবার দাম বেড়ে ৩০০-৩৫০ টাকায় ওঠে। একদিনের ব্যবধানে কীভাবে মরিচের দাম এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারা। নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আলু, আদা ও পেঁয়াজের দাম। আমরা দেখছি, আজ পেঁয়াজ তো কাল মরিচ, তেল কিংবা চিনি, চাল, মাছ, সবজি- কোনো না কোনো একটি পণ্য নিয়ে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। দেখা যায়, গত এক বছরে দেশের বাজারে চাল, ডাল, আলু, বেগুন, মরিচ, মাছ ও গরুর মাংসসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি কাঁচা মরিচে ৩৩৩ শতাংশ ও ডালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। একই চিত্র দেখা গিয়েছিল গত রমজান মাসে পেঁয়াজের বাজারে। মার্চ মাসে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৩০-৪০ টাকায়। কিন্তু মার্চের শেষ থেকেই দাম ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে জুন মাসের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বছরজুড়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এসব পদক্ষেপ ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো কাজে আসছে না। উল্টো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। যার প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ নেই এমন কয়েকটি পণ্যের দামও স্থানীয় বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের আয় যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ছে খরচ। যা আয় হচ্ছে তার প্রায় সবই খাদ্যপণ্য কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য খরচ করার মতো টাকা হাতে থাকছে না। সাধারণ মানুষের জন্য সরকার টিসিবির কার্যক্রম চালু করেছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। টিসিবির কার্যক্রম ও পরিসর বাড়ানোর তাগিদ নানা মহল থেকে বারবার দেয়া হলেও সংস্থাটির কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য নয়। করোনা দুর্যোগ দেশের উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের জীবনযাপনে চরম বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। অনেকবার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত হলেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে নানা ইস্যুতে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ জনগণকে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দেয়া সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারকে অবশ্যই চালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হতে হবে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। এ উন্নয়নের সুফল যেন জনগণ পায় তার ব্যবস্থা করাও সরকারের কাজ। এ ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
এমকে