সবচেয়ে ধনী এলাকায় ভোটের ফল নির্ধারণ করবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী
ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন গঠিত গুলশান, বনানী, সেনানিবাস ও ভাসানটেকের কিছু এলাকা নিয়ে। দেশের অভিযান জনগোষ্ঠীসহ অধিকাংশ বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলোরও অবস্থান এ এলাকায়। একইসাথে আছে এই অঞ্চলে আছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কড়াইল বস্তিসহ বেশ কয়েকটি প্রান্তিক আবাসস্থল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন আসন্ন উপনির্বাচনে এ বস্তিবাসীই ভোটের ফলাফলে বেশি প্রভাব ফেলবে।
চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ জুলাই ভোট গ্রহণ। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন সেখানকার ভোটাররা। এরই মধ্যে ভোটে লড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত (মোহাম্মদ এ আরাফাত)। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমান। সেই সাথে ঐ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জানিয়েছেন ইউটিউবার হিরো আলম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকাটি পড়েছে সংসদীয় এ আসনে। ডিএনসিসির বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির খান জানান, প্রতিটা ওয়ার্ডেই বেশ কয়েকটি বস্তি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভাসানটেক বস্তি, ধামালকোট বস্তি, মাটিকাটা বস্তি, বারনটেক বস্তি, বাইজারটেক বস্তি ও সাগরিকা বস্তি; ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কালাচাঁদপুর বস্তি, শাহাজাদপুর ঝিলপাড় বস্তি, নর্দ্দা সরকারবাড়ী দুলাল বস্তি; ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কড়াইল বস্তি, রেললাইন বস্তি, গোডাউন বস্তি, টিঅ্যান্ডটি বস্তি এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডের এরশাদনগর বস্তি, সাততলা বস্তি ও ভাঙা দেয়াল বস্তি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ঢাকা-১৭ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। এর মধ্যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৯১ হাজার ১৭৫ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ভোটার রয়েছেন ৬০ হাজার ৮২৫ জন। এছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৯ হাজার ৫৬২ জন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৯ হাজার ৩২ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৪ হাজার ৪২৪ ভোটার। এসব ভোটারের বড় একটা অংশই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
এই অঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, গুলশান-বনানীর যেকোনো নির্বাচনেই এ অঞ্চলের বস্তিগুলোয় বসবাস করা ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এদের একটা বড় অংশই সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ফলে এ জনগোষ্ঠীর ভোট আদায় করাটা যেকোনো প্রার্থীর জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।
দেশের সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইল। ডিএনসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এ এলাকায় স্বল্প আয়ের প্রায় তিন লাখ শ্রমজীবীর বসবাস। আর ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো। নির্বাচনে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর প্রভাব প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষের বসবাস। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি, অনেক ভোটার এলাকায় থাকার পরও ভোট দিতে আসেন না। আবার অনেক ভোটার রয়েছেন যারা অন্য এলাকায় বসবাস করেন। কড়াইল বস্তিতে ২৫ হাজারের মতো ভোট রয়েছে। এছাড়া রেললাইন বা গোডাউন বস্তি মিলিয়ে আরো পাঁচ-সাত হাজার ভোটার আছে। ভোটের মাঠে এসব ভোটার বড় একটা প্রভাব রাখেন। তবে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভোট পেয়েই জনপ্রতিনিধি হতে হয়।’
প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর কাছে ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো বেশ জনপ্রিয়। তিনি এ আসনে ভোটে লড়লে অন্য প্রার্থীদের জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘হিরো আলমকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করায় তার ব্যাপারে মানুষের একটা সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। এখন তিনি যদি ওই আসনে থাকা বস্তিবাসীর সঙ্গে ঠিকভাবে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন, তাহলে বলা যায় না...। এছাড়া মোহাম্মদ এ আরাফাত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রার্থী। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে পরাজিত করার জন্য হলেও হয়তোবা হিরো আলমকে ভোট দিতে পারেন। তাই বলা যায় না...। হিরো আলম যদি যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন তাহলে কিছু একটা হয়েও যেতে পারে। তবে হিরো আলমকে ওই এলাকায় নির্বাচন করতে হলে তিন হাজার ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। প্রার্থিতা বাতিলের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা হয়।’
আহমা/চাহ