ডিআইইউ'তে রাজনীতি নিষিদ্ধ করায়; সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ডিআইইউ প্রতিবেদক
মো: আল শাহারিয়া সুইট,
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি একটি মুক্ত-বুদ্ধি চর্চার বিষয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কড়া নির্দেশনা প্রদান। যার ফলপ্রসূতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত শুক্রবার (২৮শে ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন
ডিআইিউ'র প্রতিনিধি মো: আল শাহরিয়ার সুইট।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আদিল সরকার বলেন,
রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার পরিবেশ আরো উন্নত হবে।
সম্প্রতি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, এই সিদ্ধান্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত করবে এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে সহায়ক হবে।
অতীতে, ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। র্যাগিং, সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের শিক্ষার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে, আমি মনে করি, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জন এবং নিজেদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা
কর্তৃপক্ষ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন আমরা আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারব এবং বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাব।
আমি বিশ্বাস করি, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ডিআইইউ একটি শান্তিপূর্ণ এবং জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা সবাই মিলেমিশে একটি সুন্দর শিক্ষাঙ্গন তৈরি করতে পারব, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাবে। এই সিদ্ধান্ত ডিআইইউকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আমরা সবাই মিলে এর মর্যাদা রক্ষা করব, ধন্যবাদ।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো: গোলাম আজমান জিন্নাহ্ জানান,
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়।
সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের তৎপরতা চলছে। এর মধ্যে অনেক ক্যাম্পাসেই রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মানে অপরাজনীতির প্রশ্রয় দেওয়া। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক চর্চার অধিকার। যেমন একজন মানুষের রাজনীতি না করার অধিকার রয়েছে, তেমনি অন্যের রাজনীতি করারও অধিকার আছে। তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মানে সরাসরি একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করা, যা একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ডিআইইউ আরেক শিক্ষার্থী মো: আবির হোসেন জানান,
বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষার স্থান, গবেষণার স্থান, রাজনীতির নয়! বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার পবিত্র স্থান, যেখানে নতুন চিন্তা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
এটি এমন একটি পরিসর, যেখানে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। কিন্তু দুঃখ জনকভাবে, বাংলাদেশে বহু বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করে তুলেছে দলীয় ছাত্র রাজনীতি। এটি এখন আর শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার মাধ্যম নয়; বরং একটি ক্ষমতার খেলা, যেখানে শিক্ষা ও নৈতিকতার চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি, সংঘর্ষ, সহিংসতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষাদান ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধন। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির কারণে শিক্ষার পরিবেশ বারবার ব্যাহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি একসময় হয়তো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার একটি মাধ্যম ছিল, কিন্তু এখন তা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা, সহিংসতা ছড়ানো এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
ডিআইইউ আরেক শিক্ষার্থী শাউন জানান,
আমার চোখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি সময়ের অপচয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে হোক বা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্টান সব যায়গায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে জড়ানো শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে গিয়ে স্লোগান দিচ্ছে ঠিক তখন চীনের শিক্ষার্থীরা একটি নতুন প্রযুক্তি কিভাবে তৈরি করা যায় সে বিষয় নিয়ে ভাবছে। আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করে দেশের মানুষের গতি কমাচ্ছি। চীনের শিক্ষার্থীরা সেখানে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভব করে আমাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে বিক্রি করছে।
পার্থক্য না করে যদি দেখি সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পরিবেশ অনুযায়ী ছাত্ররাজনীতি যে সব কারণে বন্ধ হওয়া উচিত
ছাত্র রাজনীতির কারণে অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়। কোনো একটি দল বা গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ছাত্ররা বিশেষ সুবিধা পায়, যা সমান সুযোগের পরিপন্থী।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সহিংসতার একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। দলীয় কোন্দল, সংঘর্ষ এবং প্রতিহিংসামূলক হামলার কারণে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে।
ছাত্র রাজনীতি অনেক সময় মূলধারার রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাত্ররা তাদের নিজস্ব মত প্রকাশের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হয়। এতে শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র চিন্তাশক্তি বাধাগ্রস্ত হয়।
ছাত্র রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অনেক সময় ব্যাহত হয়। সংঘর্ষ, ধর্মঘট, বা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় এবং তাদের ক্যারিয়ার
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো: জহুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র রাজনীতির স্লোগান হবে একটাই, "প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি পরিহার
করি, সম্প্রীতির রাজনীতিতে বাংলাদেশ গড়ি"। শিক্ষা ও রাজনীতি দুটো ভিন্ন ধারা হলেও উদ্দেশ্য প্রায় একই। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচালনার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। যে দেশ বা জাতি যত শিক্ষিত, তার সমাজজীবনও তত উন্নত । তেমনই যে জাতির রাজনীতি যত পরিপূর্ণ, সে জাতিও তত বেশি উন্নত। জাতি বা রাষ্ট্রের পথপরিক্রমা কেমন হবে, তা নির্ভর করে সেই জাতি বা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চিন্তার ওপর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি যে একেবারে ক্ষতির কারণ হয়েছে তা কিন্তু নয়। এর ইতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ছাত্ররাজনীতি বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা আছে। ১৯৪৮-৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এত বেশি অবদান রেখেছিল, অন্যান্য গোষ্ঠীগত আন্দোলনের চেয়ে অনেক বেশি। এসব ছাত্র রাজনীতিবিদের মধ্যে অর্থ ও ক্ষমতার লোভ জেঁকে বসে। তারা সহজে বড় রাজনীতিবিদ ও
সম্পদশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর এই নেশার পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা পথ ভ্রষ্ট হয়। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, মাদকের বেরা জালে আটকে যায়।ধ্বংস হয়ে যায় তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। বর্তমান সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতি বন্ধ করা খুবই কঠিন। কারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় রাজনীতিবিদরা। ছাত্র রাজনীতিকে বিশুদ্ধ করতে হবে, যদিও এটি এ রাতে বদলে ফেলা অসম্ভব।আমরা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে না পারি । তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এ জাতি অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি একটি আলোচিত বিষয়, এবং এর নানা দিক রয়েছে। আমার চোখে, ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে, তবে এর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ছাত্র রাজনীতির মাঝে অনেক সময় সহিংসতার জন্ম হয়, যা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থির করে তোলে নানান সময়।
এএসএস